Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

অভিবাসন ব্যবস্থাপনা : গ্রামীণ উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ

বছর ঘুরে আবারও এলো ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস প্রতি বছরের মতো নতুন প্রতিপাদ্য নিয়ে হাজির। এবারের প্রতিপাদ্য ‘অভিবাসনের ভবিষ্যৎ বদলে দাও, খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীণ উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াও’। Change the Future Migration Invest in Food Security and Rural Development| এবারের প্রতিপাদ্যে তিনটি অংশ স্পষ্ট। অভিবাসন, খাদ্য নিরাপত্তা আর গ্রামীণ উন্নয়ন। এ তিন আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করলেই পরিষ্কার হবে এবারের প্রতিপাদ্যের মূল উদ্দেশ্য। একই সাথে আমরা সুনির্ধারণ করতে পারব আমাদের করণীয়।


মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে অভিবাসনের যাত্রা। অভিবাসন কোনো সুনির্দিষ্ট একক কারণে নয় বহুবিদ কারণ এর সাথে সংশ্লিষ্ট। রাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবেশ, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ, সুখ, শান্তি, দুর্ভিক্ষ, পরিবর্তিত জলবায়ু এসব মূলত দায়ী। সে কারণেই অভিবাসন রোধ ও ব্যবস্থাপনা বিশ্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। পরিসংখ্যানবিদ, বিজ্ঞানী, গবেষকরা বের করেছেন অভিবাসন শুধু দেশে থেকে দেশান্তরই নয় বরং দেশের অভ্যন্তরে অভিবাসন হার অনেক বেশি। পৃথিবীটাই একটা বিরাট গ্রাম। গ্রামীণ উন্নয়ন সুনিশ্চিত হলে গ্রামের শত কোটি মানুষ যেমন সুখে থাকবে তেমনি পরিকল্পিতভাবে নিরাপদ খাদ্য দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। তবেই আমরা আয়েশি জীবন যাপনে অনেকটুকু এগিয়ে যেতে পারব। পারব শুভ সুন্দর আগামীর পথে পথ চলতে। তখন অনাকাক্সিক্ষত অভিবাসন রোধ হবে।
 

বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ গ্রামীণ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত এবং তারা তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ তিতীক্ষা দিয়েও নিজ বাসভূমি আঁকড়িয়ে থাকতে চান অনাদিকালের চেনা পথ ধরে। ছোটখাটো দুর্যোগ দুর্বিপাকে তারা নিজেরা নিজেদের সক্ষমতা দিয়ে নিজেদের খাপ-খাওয়ানোর কৌশল অর্জন করে স্থিত থেকে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে অহর্নিশ। কিন্তু কখনও কখনও এ চিরায়ত অবস্থান অসহনীয় হয়ে যায়। তখনই তারা দেশান্তরিত হয়, কিংবা স্থানান্তরিত হয়, রূপান্তরিত হয়। ২০১৫ সালে ২৪৪ মিলিয়ন মানুষ আন্তর্জাতিক অভিবাসী হয়েছে। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী শুধু দেশের অভ্যন্তরে অভিবাসনের সংখ্যা ৭৬৩ মিলিয়ন যা আন্তর্জাতিক অভিবাসনের চেয়ে অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের গড় বয়স ১৫ থেকে ৩৪ এর মধ্যে। তার ভেতরেও আবার প্রায় অর্ধেক নারী। অভিবাসন চিত্রে গ্রাম থেকে শহরে আসার সংখ্যাই বেশি এবং তাহলো ৭৫ শতাংশ। দারিদ্র্য, খাদ্যাভাব, অভাব, অনটন, সম্পদের অভাব, জীবন যাত্রার মান কাক্সিক্ষত না হওয়ার কারণেই অভিবাসন বেশি ঘটে। এ ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবর্তিত জলবায়ু এবং আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট দুর্যোগই প্রধান। পরিসংখ্যান বলে আন্তর্জাতিক উদ্বাস্তুর মধ্যে অন্তত ৪ ভাগের ১ ভাগ তিনটি দেশে সীমাবদ্ধ। আর এ তিনটি দেশ হলো তুরস্ক, পাকিস্তান এবং লেবানন।


অভিবাসন শুধু দেশ থেকে দেশ নয়। দেশের ভেতরেও হতে পারে। ১৯৭৪ সালের পূর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশের কোনো শহরের জনসংখ্যা ১ মিলিয়ন ছিল না। কিন্তু বর্তমানে রাজধানী ঢাকা ১০ মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি মহানগরীতে পরিণত হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের নগর জনসংখ্যার অবস্থান পর্যালোচনা করলে  দেখা যায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনার আয়তন বহুলাংশে বেড়েছে। বিশ শতকের প্রথমার্ধে এ নগরগুলো দেশের মোট শহরবাসীর এক-তৃতীয়াংশ ধারণ করত। ১৯৯১ সালে এ হার দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের মাত্র ৭.৬ শতাংশ লোক শহরে বাস করত, ১৯৯০-এর দশকে এ হার ২০ শতাংশে উন্নীত হয়। ১৯৭৫-১৯৯০ সালে বাংলাদেশে শহরের জনসংখ্যার বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল ৩.৪ শতাংশ যা প্রতিবেশী অনেক রাষ্ট্র এবং এশিয়ার জনবহুল রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।


গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন প্রায়শ দ্বিমুখী পরিণতির জন্ম দেয়। একটি সুবিধাজনক এবং অন্যটি ক্ষতিকর। এছাড়া মিশ্র ফলও লক্ষ্য করা যায়। তবে কর্মসংস্থান এবং অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে অভিবাসনের ইতিবাচক প্রভাবই বেশি। সাময়িক অভিবাসীদের পাঠানো অর্থ তাদের গ্রামের স্বজনদের কল্যাণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। ঢাকা শহরের বস্তি এলাকায় বসবাসরত অভিবাসীরা তাদের উপার্জনের বেশির ভাগই ব্যয় করে পরিবারের খাবার এবং সন্তানের শিক্ষার জন্য। অভিবাসনের মাধ্যমে মানুষ ভাগ্যান্বেষণে স্বল্প সম্ভাবনাময় স্থান থেকে বেশি সম্ভাবনাময় স্থানে যেতে চায়। বিদেশে বাংলাদেশের অস্থায়ী অভিবাসীদের উপার্জিত অর্থ দেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়ায় এবং বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পূরণ করে। বাংলাদেশ বিশ্বের সে স্বল্পসংখ্যক দেশের একটি যেখানে অস্থায়ী অভিবাসীদের পাঠানো অর্থ জিডিপির একটা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। প্রবাসীদের পাঠানো এ অর্থ দেশে তাদের পরিবারের সদস্যদের আয়ের একটি উৎস, যা শুধু মধ্যবিত্ত বা বিত্তবান পরিবারেরই অর্থনৈতিক ভিত্তি দৃঢ় করে তা নয়, অনেক দরিদ্র পরিবারকেও তাদের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা  মোকাবিলায় সাহায্য করে  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।


অভিবাসনের ক্ষতিকর দিকের মধ্যে বড় বড় শহরে গ্রাম থেকে ক্রমাগত অভিবাসনের ফলে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ার পরিবর্তে তা বিঘিœত হয় এবং সামগ্রিকভাবে শহরের অবকাঠামোগত অবস্থা ও পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নগরের জনসংখ্যার দ্রুত ও ব্যাপক বৃদ্ধি উন্নয়নের ধারাকে ব্যাহত করে। নগরে জনসংখ্যা বাড়ার ৬০ শতাংশ ঘটে পুনঃবিভাজন সহকারে গ্রাম  থেকে শহরে স্থানান্তরের মাধ্যমে। স্বাধীনতার পর থেকে প্রধান শহরগুলোর সীমিত শিল্পায়ন অথচ বাণিজ্যের দ্রুত প্রসারভিত্তিক একটি বিশেষ ধরনের বিন্যাস কাঠামোয় জনসংখ্যার গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর ঘটে। সড়ক অবকাঠামো ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি এবং উৎপাদন, ব্যবসা,  হোটেল,  রেস্তোরাঁ, গৃহায়নসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণের বিকাশ শহরগুলোতে অদক্ষ ও অর্ধদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তাই জীবিকার প্রয়োজনে এবং সম্ভাবনাময় চাকরির জন্য গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। অসম ভূমি ব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভূমিহীন জনসংখ্যার এ স্থানান্তর প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে। এ ছাড়া গ্রামের অনেক ভূমি মালিকও বিভিন্ন উৎস থেকে উপার্জন বাড়ানোর প্রত্যাশায় গ্রাম থেকে শহরে যায়।


গ্রাম থেকে শহরে আসা পুরুষ অভিবাসীদের বেশির ভাগই কৃষিশ্রমিক। এছাড়া কৃষিপ্রধান এলাকা থেকেই মূলত স্থানান্তর ঘটে। পরিবারের অস্তিত্ব¡ রক্ষার্থে এবং অনেক ক্ষেত্রে নতুন উপায়ে উপার্জনের মাধ্যমে পারিবারিক আয় বাড়ানোর জন্য এ অভিবাসন ঘটে। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পোশাক শিল্প কারখানা বিকাশের সাথে সাথে মেয়েদের শহরে অভিবাসন বেড়ে যায়। সত্তরের দশকে শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রাধিকার এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব মানুষের গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিক্ষার পাশাপাশি অভিবাসীদের বয়স, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, পরিবারে তার দায়িত্ব¡ ও ভূমিকা এবং পারিবারিক সম্পদের উৎস বিশেষত জমিজমা থেকে আয় এসব অভিবাসন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে গণ্য হয়। সামাজিক সংযোগ এবং গন্তব্যস্থলের সুবিধা ও সেখানে সম্ভাব্য সহায়তা অভিবাসনের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচ্য। একইভাবে গ্রামীণ খামার কার্যক্রম কমে যাওয়া এবং শহরাঞ্চলের ওপর বেশি গুরুত্ব¡ারোপই প্রমাণ করে জনসংখ্যার ঘনত্বই বাংলাদেশের অভিবাসনের ধারা নির্ধারণ করে না, বরং অভিবাসীর কাজ ও কাজের বৈচিত্র্যের সুযোগ, মাথাপিছু আয়, ক্ষয়িষ্ণু উপার্জন ব্যবস্থার ঝুঁকি, প্রাকৃতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের স্তর এবং কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণ নিয়ামকের দ্বারাও অভিবাসন প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়। শহরাঞ্চলে মৌলিক সামাজিক সুবিধা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে দরিদ্র শহরবাসী, মহিলারা স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত ঝুঁকির দিক থেকে বিত্তবানদের তুলনায় বেশি ভুক্তভোগী। গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসনকারী দরিদ্র গৃহস্থরাও উচ্ছেদ, অত্যাচার, ক্রমাগত অসুস্থতা, যৌন হয়রানি এসব কঠিন হুমকির সম্মুখীন হয়। যদিও শহরের দরিদ্র ঘিঞ্জি এলাকায় বসবাসরত অভিবাসীরা গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির মতো নাগরিক সুবিধাগুলো বিধিবহির্ভূত উপায়ে ভোগের ব্যবস্থা করে।


খাদ্য নিরাপত্তা মানে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ এবং বছরব্যাপী খাদ্যের পর্যাপ্ত প্রাপ্যতা। খাদ্য নিরাপত্তা দুই রকমেরÑপারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তা এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা। পারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিটি পরিবারের পর্যাপ্ত খাদ্য সংগ্রহের সক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল, যাতে পরিবারের প্রতিটি লোক স্বাস্থ্যবান ও কর্মক্ষম থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিসম্মত খাদ্য খেতে পারে। জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা দেশের জনগণের জন্য যথেষ্ট খাদ্য সংগ্রহের সামর্থ্যরে ওপর নির্ভরশীল। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে তিনটি প্রধান বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রথমত, পরিবার ও গোটা জাতির প্রয়োজনীয় মোট খাদ্যের প্রাপ্যতা। দ্বিতীয়ত, স্থান কালভেদে খাদ্য সরবরাহের যুক্তিসঙ্গত স্থায়িত্ব। তৃতীয় নির্বিঘœ ও মানসম্মত পরিমাণ খাদ্যে প্রত্যেক পরিবারের ভৌত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবাধ অধিকারের নিশ্চয়তা।


নিরাপদ খাদ্যের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকে অবশ্যই বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা বিষাক্ত, অপুষ্টিকর খাদ্য যথেষ্ট পরিমাণে থাকলেও কোনো কাজে আসবে না, স্বাস্থ্য শরীর মন ঠিক থাকবে না। সুতরাং নিরাপদ খাদ্য দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সুনিশ্চিত করতে হবে। কারণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে জীবন-জীবিকার মান উন্নত হবে, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, পরিবেশের অবক্ষয় কমবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ গ্রহণের ওপর সংঘাত কমবে। গ্রামীণ উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে, কাক্সিক্ষত স্থায়িত্বশীলতা পাবে। বিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা ছাড়াই বাস করছেন (এফএও ২০০৩)। মানুষের জীবনের চলার অনুষঙ্গ মানুষের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, ওষুধ ও সেবা। মানুষ যখন মোটামুটি পরিসরে এগুলো নিশ্চিত পায় তখন সে নিজেকে স্বর্গসুখী মনে করেন। ক্রমবর্ধমান সংঘাত ও অস্থিরতার কারণে মানুষ (বিগত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি অভিবাসনের দিকে এগোচ্ছে)। সেক্ষেত্রে গ্রামীণ উন্নয়নের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অভিবাসনকে রোধ করা সম্ভম্ভব। প্রাকৃতিক, মানবসৃষ্ট, পারিপার্শ্বিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক এসবের সাথে ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে বিবেচ্য অভিবাসন বিশ্বের জন্য একটি জটিল চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশ যাদের নিজের সম্পদ সীমিত তাদের ওপর এ চাপ ভয়াবহ। আমাদের দেশও এর বাইরে নয়। এ দেশে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৪ ভাগের ৩ ভাগই গ্রামে বাস করেন এবং কৃষি তাদের জীবিকার প্রথম ও প্রধান অবলম্বন। সুতরাং গ্রামের কর্মক্ষম জনগণকে বিশেষ করে গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক যুবকদের এমন একটি সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে যাতে করে তারা তাদের নিজ এলাকায় থাকতে নিরাপদ/স্বস্তি বোধ করে ও পরিবেশবান্ধব জীবন-জীবিকা উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে নিরাপদ খাদ্য দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে পারে।


গ্রামীণ উন্নয়ন মানে এমন একটা অবস্থা যেখানে মানুষ স্বাভাবিকভাবে আয়েশে জীবন ধারণ করতে পারেন। প্রাপ্তির ষোলোকলা পূর্ণ না-ই বা হলো কিন্তু নিজ অতিচেনা পরিসরে জীবন-ধারণ করতে পারে স্বস্তির সাথে। তবে গ্রামীণ উন্নয়নে খাদ্য, পরিবেশ, বস্ত্র, চিকিৎসা, পুষ্টি, যোগাযোগ এগুলোতে যে মাত্রাই হোক না কেন তা আবশ্যকীয়ভাবে জায়গা করে নেবেই। গ্রামীণ উন্নয়নে ছোটখাটো ব্যবসা, শিল্প, ব্যঞ্জরিত কাজের সুযোগ, কর্মসংস্থান এগুলো উল্লেখযোগ্য। আবার মাছ চাষ, গবাদি খামার, পোলট্রি খামার, আয়বর্ধনমূলক কার্যক্রম, নার্সারি ব্যবস্থাপনা, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, বসতবাড়িতে চাষবাস, সমন্বিত খামার, মাশরুম চাষ, কুটির শিল্প, ভাসমান কৃষি কার্যক্রম, সর্জান পদ্ধতি, কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র মাঝারি ব্যবসা আরও ছোটখাটো স্বল্পপুঁজির ব্যঞ্জরিত কার্যক্রম যা সংশ্লিষ্ট করে ও চাকরির সুযোগ তৈরি করবে। এতে করে অনাকাক্সিক্ষত অভিবাসন প্রবণতা অনেকখানি কমবে। গ্রামের আসল উন্নয়নের জন্য কাক্সিক্ষত মাত্রায় পরিকল্পিত বিনিয়োগ খুব ভালো ফল দেয়। সে পথ ধরে আমরা এগিয়ে যাবো আমাদের কাক্সিক্ষত আলোকিত বিজয়ী মঞ্চে। তবেই গ্রামের ঋণাত্মক অভিবাসন চ্যালেঞ্জকে রুখে দেয়া যাবে। সুখের বিষয় যে বর্তমান সরকার এ বিষয়ে সচেষ্ট থেকে নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। কৃষি উন্নয়নে বাংলাদেশ রোলমডেল হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইতোমধ্যে। এ কথা তো ঠিক আমাদের গ্রামগুলো যদি সুষ্ঠু পরিকল্পনা আর কার্যকর বাস্তবায়ন কৌশলের মাধ্যমে বসবাসবান্ধব করা যায় তাহলে এ অভিবাসন অনেক কমে যাবে কিংবা বন্ধ হবে। অভিবাসন প্রক্রিয়া ঠেকানো যেমন সহজ না, আবার বন্ধ করা অসাধ্যও না। এজন্য জরুরি দরকার বাস্তবতার নিরিখে গ্রামভিত্তিক সুষ্ঠু যৌক্তিক পরিকল্পনা এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন। তবেই আমাদের কাক্সিক্ষত গ্রামীণ উন্নয়ন বাস্তবায়ন হবে এবং তখন অভিবাসন এমনিতেই কমে যাবে, থেমে যাবে মানুষের আগমন বহির্গমনের অযৌক্তিক প্রবাহ। গ্রাম হবে উন্নয়নের রোলমডেল।


গ্রামীণ কৃষিনির্ভর অর্থনীতিকে আরও সুদৃঢ়করণের মাধ্যমে অভিবাসনের চ্যালেঞ্জ অনেকটাই মোকাবিলা করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে পরিবর্তিত জলবায়ু সহনশীল পরিবেশবান্ধব লাগসই কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার, ফসলের নিত্যনতুন জাত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বিস্তৃতকরণ, মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পরিবেশসম্মত চাষাবাদ এসবের পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন, প্রাণিজ আমিষ পূরণের লক্ষ্যে মাছ ও গবাদিপ্রাণী পালন বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। সে লক্ষ্যে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী, গবেষক, সম্প্রসারণবিদসহ সংশ্লিষ্টরা মনোনিবেশ করবেন। সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিতে আমাদের অনেক উন্নয়ন ও উন্নতি হয়েছে। দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি আমরা বিদেশে খাদ্য রপ্তানিও করছি। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতাকে টেকসই রূপ দিয়ে সুখী, সমৃদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বিপুল জনগোষ্ঠীর অভিবাসন যখন পৃথিবীর জন্য একটি বড় চ্যলেঞ্জ তখন তা মোকাবিলার প্রেক্ষাপটে এ প্রতিপাদ্য যথাযথ ও সময়োপযোগী।


জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষি, প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব প্রকটভাবে লক্ষণীয়। বিভিন্ন কারণেই অগণিত মানুষ তাদের চির পরিচিত বাপদাদার বাস্তুভিটা ত্যাগ করে শহরের বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লাখ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে অভিবাসনে বাধ্য হচ্ছেন। এটি সরাসরি সামাজিকভাবে সম্পদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দারিদ্র্য ও সুবিধাবঞ্চিত জনসাধারণের জন্য আর্থিক ও বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা সম্ভব হয়েছে। উন্নয়ন প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্য এ পরিকল্পনায় ক্রম উৎপাদনশীলতা, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা বিস্তৃত করার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। বর্তমান সরকার ভূমিহীন, গৃহহীন, ঠিকানাহীন এবং নদীভাঙা পরিবারকে সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দুর্বল গ্রামীণ অবকাঠামো এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় খামার এবং কৃষিভিত্তিক আয় বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট বাধাগুলো অপসারণে মনোযোগ দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে দরিদ্র কৃষকের কৃষি ভর্তুকি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, কৃষি উপকরণ কার্ড, কৃষি যান্ত্রিকীরণ ভতুর্কি, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয়বর্ধনমূলক কর্মসংস্থান, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, সমবায়ভিত্তিক ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপনের জন্য সহজ শর্তে মূলধন জোগান দেয়া হচ্ছে। পুষ্টি, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তাসহ দারিদ্র্য বিমোচন ও অন্যান্য সামাজিক উন্নয়নে এ ধরনের কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।


সবার জন্য নিরাপদ খাদ্যের টেকসই জোগান নিশ্চিত করতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন, সম্প্রসারণ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন, উদ্ভিজ ও প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিজ্ঞানী, গবেষক, সম্প্রসারণবিদ, উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উন্নয়নের যে জয়যাত্রা শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ আর ঝুঁকির মুখে থাকা গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন আর খাদ্য নিরাপত্তার অনিশ্চয়তা কমানোর প্রয়োজনীয়তায় শহরমুখী হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দেশের সার্বিক উন্নয়নে অভিবাসনের এ ঢেউ প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য গ্রামীণ উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো সে সাথে টেকসই পরিকল্পনা। বর্তমান সরকার গ্রামীণ উন্নয়নের বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এছাড়া কৃষি উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির তথ্য কৌশল আর প্রযুক্তিতে আনা হচ্ছে আধুনিক ও লাগসই ব্যবস্থাপনা এবং কাক্সিক্ষত নানা ধরনের পরিবর্তন। দুর্বল গ্রামীণ অবকাঠামো এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় খামার ও কৃষিভিত্তিক আয় বাড়াতে সুনির্দিষ্ট বাধাগুলো অপসারণে মনোযোগ দেয়া হয়েছে। ভর্তুকি, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয়বর্ধনমূলক কর্মসংস্থান, সরকারের এসব উদ্যোগ সঠিক বাস্তবায়ন হলে আমাদের সার্বিক সক্ষমতা বাড়বে জ্যামিতিক হারে, গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে রোধ হবে অভিবাসন সমস্যা। সাথে গ্রামীণ উন্নয়ন নিশ্চিত করে সুনিশ্চিত হবে নিরাপদ খাদ্য দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা। আমাদের বিশ্বাস বিশ্ব খাদ্য দিবসকে সফল করতে প্রতিপাদ্যভিত্তিক আমাদের ব্যঞ্জরিত প্রয়াস খাদ্য দিবসের তাৎপর্যকে অনুধাবন করে দেশীয় আদলে যথাযথ যৌক্তিক বাস্তবায়ন কৌশল গ্রহণ করে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারব এবং পৌঁছতে পারব আমাদের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সমৃদ্ধির আলোকিত সীমানায়। তখনই বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্যভিত্তিক কার্যক্রম সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছবে, আয়েশে আমরাও হবো সমৃদ্ধ। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অভিবাসনের ভবিষ্যৎ বদলে দিয়ে কাক্সিক্ষত আবাহনকে আহ্বান জানাব। আর গ্রামীণ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ বাড়িয়ে গ্রামের উন্নয়ন নিশ্চিত করব তার প্রেক্ষিতে খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে আমরা সুখে থাকব, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে।

 

কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম*
*পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon